ধান ফসল আবাদের পর কর্তন, সংগ্রহ ও গুদামজাত করা হয়। এ ধান ও চাল অনেকদিন ধরে অর্থাৎ পরবর্তী মৌসুম পর্যন্ত খাওয়া হয়। কোনো কোনো সময় বিশেষ জাতীয় প্রয়োজনে ধান সংরক্ষণ করা হয়। যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ, খরা ইত্যাদি সময় যাতে খাদ্যাভাব দেখা না যায়।
ধান কর্তনের পরের দিন থেকে এর গুণাগুণ ও পরিমাণ কমতে থাকে। গুদামজাত করার পর থেকে গুদামে দানার ক্ষতি ২-৬ ভাগ পর্যন্ত থেকে পারে। ধান সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো গুদামজাত অবস্থায় ফসলের গুণাগুণ ও পরিমাণ সঠিকভাবে বজায় রাখা। এছাড়াও অমৌসুমে ধান পাওয়া যায় এবং এর অপচয় কম হয়। গুদামে ধান তিন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত থেকে পারে। যেমন-
ক) যান্ত্রিক কারণ
খ) জৈবিক কারণ
গ) জৈব-রাসায়নিক কারণ
যান্ত্রিক কারণ : ধান কর্তনের ফলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নাড়াচাড়ার ফলে ধানবীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধান বীজে আর্দ্রতার পরিবর্তন হলে বীজ সংকুচিত হয়ে যায়। এজন্য গুদামঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সুষ্ঠুভাবে ধান সংরক্ষণের জন্য বীজে ১২-১৪ ভাগ আর্দ্রতায় আনা হয় ।
জৈবিক কারণ : বিভিন্ন অনুজীব বিশেষ করে ছত্রাক এবং গুদামজাত ক্ষতিকর পোকামাকড় বীজের গুণাগুণ নষ্ট করে। এজন্য গুদামের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। অধিকাংশ অনুজীবের ও পোকার বৃদ্ধির জন্য ৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা জরুরি। গুদামের সবচেয়ে ক্ষতিকরক পোকা হচ্ছে বিটল ও মথ। এছাড়া ইঁদুর ও পাখি অনেক সময় গুদামে ঢুকে সংরক্ষিত ধানের ক্ষতি করে।
জৈব রাসায়নিক কারণ : ধানবীজ একটি জীবন্ত শস্যদানা। গুদামের মধ্যেও এর ভ্রূণের শ্বসন ক্রিয়া চলতে থাকে। ফলে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তাপ ও জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয়। তাই ধানবীজ নিরাপদ সংরক্ষণের জন্য এই জলীয় বাষ্প ও তাপ বের করা খুবই প্রয়োজন।
গুদামঘরের প্রকারভেদ : বিভিন্নভাবে ধানবীজ গুদামে সংরক্ষণ করা যায়। এগুলো নিম্নরূপ-
ক) খামারবাড়িতে সংরক্ষণ : খাবার চাহিদা মেটানোর জন্য ধানবীজ বা শস্যদানা খামারের ভিতরেই গুদামে সংরক্ষণ করা হয়। এজন্য যে পাত্র ব্যবহার করা হয় তা হল-চটের বস্তা, কাঠের বাক্স, বাঁশের ঝুড়ি বা ডোল ও ড্রাম।
খ) ফসলের গোলা : দীর্ঘসময় ধরে ধান গুদামজাত করার জন্য ছোট আকারের কাঠামো তৈরি করা হয়। যেমন- কাঠ, বাঁশ, ধাতব শিট বা সিমেন্টের ঢালাই ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত গোলা ।
গ) পাকা গুদাম : এ ক্ষেত্রে সাধারণত চালের মিলে এবং সরকারি সংস্থায় পাকা গুদাম ব্যবহার করে গুদামজাত করা হয়। ধানবীজকে বস্তায় ভরে গুদামে সারি করে স্তরে স্তরে সাজানো হয়। গুদামে ধানবীজের বস্তা ভিন্ন সারিতে সাজানো যেতে পারে। ফসলের দানা শস্যের বস্তা সাজানোর পদ্ধতি চিত্রে দেখানো হলো। এ ধরনের গুদামের মেঝে দেয়াল ও ছাদ পাকা করা হয় এবং আর্দ্রতা প্রতিরোধক করা হয়।
ঘ) ঢালাও গুদাম : শস্যদানা গুদামঘরের মেঝেতে স্তূপাকারে রাখা হয়, তবে আলো বাতাস চলাচলের যথাযথ ব্যবস্থা রাখতে হয়। এখানে কোনো বস্তা বা ব্যাগ ব্যবহার করা হয় না।
ঙ) সাইলো : খাদ্য মন্ত্রণালয় দীর্ঘ সময় ধরে ধান বা চাল সংরক্ষণের জন্য যে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত গুদাম তৈরি করে তাকে সাইলো বলে ।
Read more